রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০১ অপরাহ্ন
মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি॥ করোনা ভাইরাসে দীর্ঘ ৫৪৪ দিন বন্ধ থাকার পর রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনে প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী গত ৩ দিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে। দীর্ঘ ছুটির পর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে বিদ্যালয়ের এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। যে কোন সময় স্কুল ভবনের ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। ফলে আতঙ্ক বিরাজ করছে অভিভাবকদের মাঝেও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১১৬ নং দক্ষিণ পূর্ব মিঠাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিগত-১৯৯৫ইং সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে একতলা ভবন নির্মাণ করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্কুল ভবন নির্মাণের শুরুতেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্ন মানের কাজ করার অভিযোগ করেও কোন ফল পায়নি। এদিকে বিকল্প কোন ভবন না থাকায় ওই ভবনে চলে আসছে পাঠদান। দীর্ঘদিন ওই ভবন সংস্কার না করায় বহু আগেই বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ অবস্থা বিরাজ করে। এর মধ্যে করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘ ১৭ মাস বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গত ও চলতি বছরের অব্যাহত ভারী বর্ষণে বিদ্যালয় ভবনটি আরও নাজুক অবস্থায় পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২৫ বছর আগে নির্মিত চার কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবনের বেহাল দশা। দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট না করায় হাঁটু পানি-কাঁদা ভেঙ্গে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হয়। দেখা যায়- নাজুক ২ কক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ৩০/৩৫ শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। সবার মধ্যেই এক ধরণের উৎকণ্ঠা। এরমধ্যে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে কোমলমতিদের মধ্যে উৎকণ্ঠা অরও বেড়ে যায়। ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ায় বাহির থেকে বিভিন্ন স্থানের রড দেখা যাচ্ছে। ভবনের নাজুক দরজা, জানালার গ্রিলে মরিচা পড়ে রয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা জানায়, দীর্ঘদিন পর ক্লাস খুললেও তাদের মাঝে আনন্দ নেই। কখন যেন ছাদ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে সেই ভয়ে থাকে।
ইমন নামের পঞ্চম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী জানান, ভবন ধসে পড়ার আতংকে ঠিকভাবে ক্লাসে মনযোগী হতে পারছে না তারা।
বিদ্যালয়ের জমি দাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের ভবনের সমস্যার বিষয়টি স্থানীয় এমপিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার জানালেও কোন সুরাহা হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা সুলতানা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রায় দেড়’শ শিক্ষার্থীর ক্লাস করার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি গত ১১ জুলাই-২০১৮ তারিখ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। ওই সময়েই বিদ্যালয়ের অবস্থা নাজুক ও জরাজীর্ণ ছিল। আমি যথাসময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি অবহিত করি। দীর্ঘ সময়েও নতুন ভবন কিংবা বর্তমান ভবনটি সংস্কার করা হয়নি।
তিনি আরও জানান, জরাজীর্ণ ভবনের কারণে প্রায়ই বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনা ঘটে।
সোমবার দুপুরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে আসেন। এসময় তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ। খুব শীঘ্রই বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রাখা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির আহম্মেদ (অঃ দাঃ) বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনের বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসিক সমন্বয় সভায় উত্থাপন করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply